নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রতিবছর অন্তত ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সোনালী আঁশ পাট আবাদ করেন ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষকরা। যে কারণে পাটচাষে বিখ্যাত এই দুটি উপজেলা। বাণিজ্যিকভাবে পাট উৎপাদন করেই এখানকার কৃষকরা স্বাবলম্বী। তবে গেল কয়েক বছর ধরে ভালো নেই পাট চাষিরা। শতচেষ্টা করেও পাটচাষে সুদিন ফেরাতে পারছেন না তারা। গত দুই বছর বর্ষার পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারেনি কৃষকরা। এবার বৃষ্টির পানির অভাবে ও তীব্র দাবদাহের কারণে পাট গাছের বাড়ন্ত কম হয়েছে।
বিগত বছরগুলোয় পাটচাষ করে ধরা খাওয়া কৃষকরা এবারও উৎপাদন খরচ ঘরে তুলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। এমন অবস্থায় পাটচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। তবে কৃষকদের দাবি, এবার পাটের ভালো দাম পেলে তারা এর চাষ করে টিকে থাকতে পারবেন। আর যদি দাম কম পায়, তাহলে পথে বসে যেতে হবে তাদের।
সালথা উপজেলা গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ গ্রামের পাটচাষি মোহাম্মাদ হোসেল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই বছর বর্ষার পানির অভাবে ঠিকমতো পাট জাগ দেয়া যায়নি। মাটি খুঁড়ে পাট জাগ দিতে গিয়ে পাটের রঙ হারিয়েছি। ফলে রঙ হারানো পাট বাজারে নিয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি করেছি। এবার বৃষ্টির পানির অভাবে পাটের গাছ বেশি বড় হয়নি। যে কারণে ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, গত বছর প্রতিবিঘা জমিতে ১৭ থেকে ১৮ মণ পাট পেয়েছি। এবার আমি ৮ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি।
ইতোমধ্যে পাট কাটা ও আঁশ ছাড়ানো শুরু করেছি। তাতে হিসাব করে দেখেছি এবার অর্ধেক ফলনও পাব না। প্রতি বিঘায় ৭ থেকে ৮ মণ পাট পেতে পারি। বর্তমানে বাজারে পাটের যে দাম তাতে উৎপাদন খরচও ঘরে তুলতে পারব না। তবে পাটের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব।
নগরকান্দার ছাগলদী গ্রামের পাটচাষি আমজেদ মাতুব্বর বলেন, পাটের ভরা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা পায়নি। এমনকি গভীর নলকূপেও পানি না পাওয়ায় স্যালোমেশিন দিয়ে ঠিকমতো সেচ দিতে পারিনি। এমন অবস্থায় পাটের গাছ বেড়ে ওঠেনি।
আর এখন বড় হওয়ার সুযোগও নেই। সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, সালথায় এবার ১৩ হাজার জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। নিচু জমিগুলোতে পানি চলে আসায় পাট কাটতে শুরু করেছে কৃষকরা। আগাম পাট কাটায় ফলন অনেকটা কম পাওয়া যাচ্ছে। আরো কয়েক দিন পর পাটগুলো কাটলে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোস বলেন, নগরকান্দায় এ বছর ১১ হাজার ৪৩৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। বিপণকালে খরা এবং সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়াতে পাটের বৃদ্ধি আশানুরূপ হয়নি। বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে এবং খালে-বিলে পানি রয়েছে।
ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ পাট কর্তন হয়েছে এবং জাগ দেয়া চলছে। গুণগত মানের আঁশ উৎপাদনে করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাটের ভালো দাম পেলে ফলনের বিষয়টি কৃষকদের পুষিয়ে যাবে।
